শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত : ৬:২৭ অপরাহ্ন শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
রায়হান সিকদারঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণে গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে ডলুখাল, হাতিয়ার খাল ও সাতগড় ছড়া খালের পানি বেড়ে উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ৫টি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা ও বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে আধুনগর ইউনিয়নের দুটি স্থান ( আধুনগরের সিপাহী পাড়া সর্দানী পাড়া সংযোগের শাহ মজিদিয়া-রশিদিয়া সড়ক) এবং আধুনগর সিকদার পাড়া সড়কের মাঝখানে ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টির দিন পানি বন্দি পরিবারের সদস্য ঘুমাতে পারনি। খালের পানির তীব্র স্রোতের কারণে ভেঙ্গে গেছে সড়কগুলো। চরম দূর্ভোগে এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের হাতিয়াল খালের তীব্র স্রোতে সিকদার পাড়া, মনসুর আলি সিকদার পাড়া, ডলু নদির স্রোতে ঘটিয়ার পাড়া, চৌধুরী পাড়া,মৌলভী পাড়া,রুস্তমের পাড়াসহ কয়েকটি পাড়ায় পানি ঢুকে পড়েছে, পুরো এলাকার মানুষ পানি বন্দিতে রয়েছে। উপজেলার পদুয়া নয়াপাড়া, দরগামুড়া, পদুয়া মাঠের পূর্ব পাশে এবং ধলিবিলা চাঁদার পাড়া,ফরিয়াদেকুল রাবারড্যাম এলাকা,নিচতালুক,দরগাহ মুড়া, পেঠান শাহ, পুর্ব মীর পাড়া,জলদাশ পাড়া সহ কয়েকটি এলাকা পানি বন্দী রয়েছে। চুনতি ইউনিয়নের সাতগড় পাটিয়াল পাড়া, ফারাঙ্গা এলাকায়,হিন্দু পাড়া এলাকায় পানি বন্দি রয়েছে।চরম্বা রাজঘাটা এলাকায় সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন,মাইজবিলা,বাইয়ার, জান মোঃ পাড়াসহ কয়েকটি পাহাড়ি এলাকাগুলোর সড়ক ভেঙ্গে পড়েছে। আমিরাবাদ সুখছড়ি গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বন্দি রয়েছে।উপজেলা সদরের সুখছড়ি খালের পানির স্রোতের কারণে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে, দরবেশহাট এলাকা, দক্ষিণ সুখছড়ি এলাকা,পোস্ট অফিসের সড়ক পানি বন্দি রয়েছে।পুটিবিলায় সড়াইয়া, সরই খালের তীব্র স্রোতের কারণে কয়েকটি এলাকায় পানি বন্দি রয়েছে।অনেক মাছের চাষকৃত পুকুর ডুবে গেছে। বিশেষ করে আধুনগর ইউনিয়নের দুটি স্থানে টুকরো টুকরো ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমিরাবাদ ইউনিয়নের টংকাবর্তী খালের ২নং, ৩নং ওয়ার্ডের সড়কগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের ৪০টি পরিবার,চট্টলা পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বন্দি।বড়হাতিয়ার নিচু জায়গায় পাহাড়ি ঢল নেমে ১নং, ৩নং ওয়ার্ড এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অবকাঠামোগত গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে।
খবর পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার(রুঃ দাঃ) মোহাম্মদ শাহজাহান, লোহাগাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) মুুহাম্মদ মাহবুব আলম শাওন ভুঁইয়া, আধুনগর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নাজিম উদ্দিন, চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জনু কোম্পানী,পদুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনর রশিদসহ অন্যান্যা জনপ্রতিনিধিরা।
আধুনগর ইউপির মেম্বার শাহজাহান চৌধুরী পারভেজ জানান, ভারী বর্ষণে হাতিয়ার খালের তীব্র স্রোতে আমাদের এলাকার সড়কগুলো টুকরো টুকরো ভেঙে গেছে। ভারী বর্ষণ ও ঢলে এলাকা প্লাবিত হয়ে কৃষিজমি এবং বাড়িঘরে পানি উঠেছে। সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে শঙ্কায় দিন কাটতে হচ্ছে আমাদের এলাকার লোকজন।
আধুনগর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নাজিম উদ্দিন জানান, আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গনগুলো পরিদর্শন করেছি। ভারী বর্ষণের কারণে এলাকার ৫/৬টির বেশি জায়গার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েকটি সড়কের অংশ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সিপাহী পাড়া সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।অবহেলিত সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পদুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হারুনর রশিদ জানান,আমাদের পদুয়া নয়াপাড়া, দরগামুড়া,জলদাশ পাড়া,ধলিবিলা চাদার পাড়া, আঁধারমানিক, ফরিয়াদেকুল রাবারড্যাম এলাকা,নিজতালুকসহ বিভিন্ন এলাকা পানি বন্দি রয়েছে। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে দৃষ্ঠি আকর্ষণ করছি।
চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জানান, আমাদের ইউনিয়নে সাতগড় হিন্দু পাড়া, পাটিয়াল পাড়াসহ কয়েকটি গ্রাম পানি বন্দিতে রয়েছে।বিশেষ করে আমারদের পাহাড়ি এলাকার মানুষগুলো পানি বন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাহবুব আলম শাওন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনের জন্য সার্বিক সহযোগীতা দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার(রুঃদাঃ) মোঃ শাহজাহান জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গনগুলো পরিদর্শন করেছি। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ (শুকনো খাবার) প্রদান করা হবে বলেও তিনি জানান।