রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পদুয়া হাইস্কুলে ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

প্রকাশিত : ৩:৩২ পূর্বাহ্ন রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

রায়হান সিকদারঃ

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম পদুয়ি এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে মাটির দেওয়ালে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। যেকোন সময় মাটির দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। দেওয়ালে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল।

সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মাটির দেওয়াল ও টিনের ছাউনির একটি ভবনে পাঠদান শুরু করা হয়। বর্তমানে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২ হাজার ৪৭ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন ২৭ জন। এই স্কুল থেকে প্রতি বছর এসএসসিতে উপজেলায় শতভাগ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। স্কুলভবনটি বর্তমানে ক্লাস নেওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাটির দেওয়ালে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। ছাউনির টিনগুলোতে বড় বড় ছিদ্র হয়ে গেছে।
বৃষ্টি হলে ক্লাসে পানি পড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বই খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দরজা, জানালা ভাঙাচুরা। ছাদের বিম ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুরো ভবনের রুমগুলোর দরজা ভাঙ্গা।ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জায়গা সংকোলনের কারণে বারান্দায় পাঠদান করতে হয় শিক্ষার্থীদের। তারা তখন ভয়ে ভয়ে এবং আতংকে থাকে। বর্ষার মৌসমে টিম টিম বৃষ্টিতে কক্ষ ভিজে যায়। আর গরমের মৌসমে গরমের তীব্রতার কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।

৭ম শ্রেনীর ছাত্রী উম্মে ছালমা শিমু ও ফারজানা আকতার জানান, আমরা ভবনটিতে পড়ালেখা করার সময় ভয়ে ভয়ে আতংকে থাকি। কখন যে দেওয়ার মাটি ভেঙ্গে ও বিম ভেঙ্গে পড়ে যায়। অতি কষ্টের মাধ্যমে মাটির ভবনে আমাদের ক্লাস করতে হয়। আমরা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে সুদৃষ্টি কামনা করছি।

স্কূল শিক্ষক মাস্টার মিজানুর রহমান জানান,
ঝরাজির্ণ ভবনে খুব কষ্ট করে ক্লাস নিতে হয়। রুম সংকটের কারণে স্কুলের বারান্দার ক্লাস নিতে হচ্ছে। যেকোন সময় ভবনটি ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে কষ্টের সীমা নেই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) মোসলেহ উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের সমস্যা বহুমূখী।এই স্কুলটি অনেক পুরোনো ও প্রাচীন স্কুল হলেই এ বিদ্যালয়ে তেমন কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। ঝরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার সময় ব্যাহত হচ্ছে। রুম সংকটরের কারণে সপ্তাহে ২দিন ক্লাস বন্ধ রাখতে হচ্ছে।গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক পরিদর্শনে আসলে তারা এ ভবনকে পরিত্যক্ত করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন। আমাদের কোন ভবন না থাকার কারণে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাঠদান করাতে হচ্ছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার এসএম জাবেদ করিম জানান, গেল মাঁচ মাসে করোনাকালীন সময় ছিল। তখন আমি বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি।শিক্ষার্থীরা ঝিঁমিয়ে পড়েছিল। তাদেরকে সচেতন করতে কাজ করেছি। বিদ্যালয়ের সামনে বখাটে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে কাজ করেছি। বিদ্যালয়ে ২১টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।জায়গার অভাবে বারান্দাও পাঠদান করাতে হয়। বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে মাননীয় এমপি মহোদয়কে অবগত করেছি। আমার জানামতে, চট্টগ্রামের এ রকম কোন বিদ্যালয় নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নতুন ভবন হলেও এ বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। আশা করছি অচিরেই এটির একটা স্থায়ী সমাধান হবে।

লোহাগাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুুহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ কে অবহিত করা হবে তিনি জানান।

এই বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক-অভিভাবিকাবৃন্দরা।

আরো পড়ুন