মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত : ৭:৩৩ পূর্বাহ্ন মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
লোহাগাড়া প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আবু আহমদের বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশসনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন ধরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যেখানে বিনামুল্যে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। সরকারী ফি আদায়ের বাইরেও বিভিন্ন ধরণের সনদ আদায়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি ।
অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আবু আহমদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছে।গেল কয়েকবছর পুর্বে নোয়ারবিলা আছমা বেগম তার মেয়ে উম্মে ছালমার জন্য একটি জন্মনিবন্ধন করতে উদ্যেক্তা আবু আহমদকে ৪হাজার টাকা দেন। পরে তিনি তার মেয়ের নামে একটি জন্মনিবন্ধন করে দেয়। সেখানে তারিখ উল্লেখ করেন ১৫/০৯/১৯৯৫ইংরেজী।পরবর্তীতে অনলাইনে দেখা যায়,ওই নামে উম্মে ছালমা নামের কোন নিবন্ধন হয়নি। সমশুল আলম নামে নিবন্ধিত হয়েছে। পরে ভুক্তভোগী ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান তার কোন অনলাইন নিবন্ধন হয়নি। তার প্রকৃত বয়স ৭/০৫/২০০৩। অপরদিকে, মাইজবিলার ইয়াছিনের পুত্র মোবাশিরুল হাসানের নামে একটি নিবন্ধন হয়। সেটাই সম্পূূণ ভূয়া। নিবন্ধন বহি ৩০নং নামে কোন বই নেই। টাকার মাধ্যমে পরিষদের উদ্যোক্তা এসব নিবন্ধনগুলো বানিয়ে দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সাধারণ জনগণ বিপাকে পড়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ভূয়া ওয়ারিশ সনদ সার্টিফিকেট বানিয়ে দেয়।
এসব কর্মকান্ড নিয়ে চরম্বার নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সকল মেম্বারগণ উদ্যোক্তা আবু আহমদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী উম্মে ছালমার মা আছমা বেগম জানান, আমি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে উদ্যোক্তাকে আমার মেয়ের জন্য একটি নিবন্ধন করার জন্য বলি। কিন্তু তিনি আমার কাছ থেকে নিবন্ধনের জন্য ৪হাজার টাকা নেয়। পরবর্তীতে আমার নাতনীকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য পরিষদে গেলে জন্মনিবন্ধন টি কোন অনলাইন হয়নি। সেটি সম্পূর্ণ ভূয়া। ওই নামে কোন নিবন্ধন হয়নি। আমি উদ্যোক্তার শাস্তি দাবী করছি ।
ভুক্তভোগী মুহাম্মদ ইয়াছিন জানান, আমার ছেলে মোবাশিরুল হাসানের জন্য আবু আহমদকে নিবন্ধন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করি। পরবর্তীতে আমার জন্মনিবন্ধনে ৩০নং বহি উল্লেখ করা হয়। ওই নং কোন বহি নেই।
স্হানীয় এলাকার মুরুব্বী সাবেক মেম্বার আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম জানান,আবু আহমদ চরম্বার বিভিন্ন জনের কাছ ভূয়া নিবন্ধন,ওয়ারিশ সনদ করে দিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়। সাধারণ মানুষ তার কর্মকান্ডে অনেক অতিষ্ঠ। প্রশাসনের কাছে সুষ্ট বিচারের জোর দাবী জানাচ্ছি।
চরম্বা ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মুহাম্মদ সোলাইমান জানান,উদ্যোক্তা আবু আহমদের কর্মকান্ড দুঃখজনক। সাধারণ মানুষ তার কাছ থেকে তেমন কোন সেবা পায়নি। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশসনদ সার্টিফিকেট দিয়েছে জাল। অনেক টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ইউএনও স্যারকে অবহিত করেছি।
চরম্বা ইউপির সচিব মুুহাম্মদ অহিদুর রহমান জানান, উদ্যোক্তা আবু আহমদ আমার এবং চেয়ারম্যান সাহেবের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভূয়া জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে অনেক ভূয়া নিবন্ধন সনদ হাতে পেয়েছি।হাজার হাজার টাকা তিনি হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহি অফিসার মহোদয়কে অবগত করেছি।
চরম্বা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার শফিকুর রহমান জানান, বিষয়টি দুঃখজনক।আবু আহমদ কে আমার নির্বাচনের কয়েকমাস আগে ভূয়া নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগীরা আমাকে জানালে তাকে উদ্যোক্তার কর্মকান্ড থেকে অব্যাহতি রেখেছি। তার কারণে আমারও অনেক ক্ষতি হয়েছে।
চরম্বা ইউপির নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মৌলানা হেলাল উদ্দিন জানান,সাধারণ জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বিভিন্ন হয়রানী থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। উদ্যোক্তা আবু আহমদের বিরুদ্ধে আমি এবং পরিষদের সকল মেম্বারগণ ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি । তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিময়, অর্থের বিনিময়ে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ সার্টিফিকেট দেওয়ার নামে চেয়ারম্যান, সচিবের স্বাক্ষর জাল করে বানিয়ে দেয়। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত চরম্বা ইউপির ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আবু আহমদ জানান, আসলে এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়ষন্ত্র। আমি কারও কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিইনি। বিনামুল্যে সেবা দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও গভীর ষড়ষন্ত্রমুলক বলেও তিনি দাবী করেন।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মুহাম্মদ আহসান হাবীব জিতু জানান,চরম্বার জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণ উদ্যোক্তা আবু আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ যাচাই-বাচাই চলছে।সরকারী ফি বাইরে সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে কোন ধরণের টাকা নেওয়া যাবেনা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তদন্ত সাপেক্ষে উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।