শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪
প্রকাশিত : ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪
শহীদুল ইসলাম বাবর
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম খুনের নেপথ্যেও এক নারী- যেমন সব বড় ঘটনার পেছনে থাকে নারী”-লেডি বিহাইন্ড দি সিন”। ইতিমধ্যেই সিআইডি গ্রেফতার করেছে এক কসাইকে। ভাঙড় এলাকায় খোঁজ চলছে মৃত সাংসদের দেহের অংশের। দেশে ইতিমধ্যেই ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই ৩ সন্দেহভাজনের মধ্যে অন্যতম হল রহস্যময়ী শিলাস্তি রহমান। শিলাস্তি সহ ৩ জনকে এদিন হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এই শিলাস্তির ডাকেই সাড়া দিয়ে নিউটাউনে আসেন এমপি আনার। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এই নারীর “মধু ফাঁদে” পড়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম?
শিলস্তি ছাড়াও তনভির, শিমূল ভুঁইঞাকেও ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এই হেফাজত চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আর্জি জানায় পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি আবেদন মন্জুর করেছেন। জানা গেছে এই শিমূল আগে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিল। এরপর সে নাম বদলে ফেলে। আমানুল্লাহ নাম নিয়ে সে জাল পাসপোর্ট বানায়। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রের দাবি কলকাতায় বাংলাদেশের সাংসদকে খুন করবে বলেই এই জাল পাসপোর্ট নিয়েছিল শিমূল। পরে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দেওয়া ছিল তার উদ্দেশ্য।
আনোয়ারুল আজিম আনার খুনে উঠে আসছে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আখতারউজ্জামান শাহিনের নাম। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহিন খুনের পর নেপালের পালিয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। পুলিশ বলছে, আনোয়ারুলকে খুনের পরিকল্পনা ২ থেকে ৩ মাস আগে করা হয়। এই খুনের মাস্টারমাইন্ড শাহিন। বাংলাদেশের গুলশান ও বসুন্ধরা এলাকার ২ টি বাড়িতে এই খুন নিয়ে পরিকল্পনা চলে।
কলকতায় এমপি আনার খুন হওয়ার পর শাহীনের বান্ধবী হিসেবে নাম আসে এই শিলাস্তি রহমান, যার আরেক নাম সেলে নিস্কি। শুক্রবার শুনানি শেষে ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সূত্রের খবর, ১৩ মে কলকাতায় এমপি আনার খুন করার পর ১৫ মে প্রধান কিলার আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ঢাকায় চলে যান শিলাস্তি। বিমানবন্দর থেকে উঠেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শাহীনের অভিজাত ফ্ল্যাটে। এমপিকে খুন করে সফল হওয়ায় ওই রাতেই শাহীন সেখানে পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে মনোরঞ্জন করেন এই শিলাস্তি ওরফে সেলে নিস্কি।জানা যাচ্ছে যে শিলাস্তিকে দিয়েই এমপি আনারকে কলকাতা আনার ফাঁদ পাততে পারেন খুনের মাস্টারমাইন্ড শাহীন। হয়তো ওই হানি ট্র্যাপেই পা দিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন এমপি আনার। এমপি আনার খুনের সময়ে এই শিলাস্তি কলকাতায় শাহীনের ভাড়া ফ্ল্যাটে ছিলেন। তবে যে ফ্লোরে হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেখানে তিনি ছিলেন না বলেই খবর। পরে হত্যার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এখন পর্যন্ত হত্যায় সরাসরি তার যোগাযোগ মেলেনি।
অ্যাপার্টমেন্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে আনার একজন মহিলার সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকছেন। তদন্ত ইঙ্গিত করে যে এমপি ‘মধু ফাঁদে’ পড়েছিলেন। মনে হচ্ছে তিনি মহিলার দ্বারা প্রলুব্ধ হয়েছিলেন। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান, যিনি এই খুনের মাস্টারমাইন্ড হতে পারেন এবং শিলাস্তি রহমানের পরিচিত ছিলেন। তিনি আজীমের খুনিদের ৫ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন। দেশের এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমে জানান, সীমান্তকেন্দ্রিক অবৈধ কারবারের বিরোধ থেকে হত্যাকাণ্ড হতে পারে। বড় অঙ্কের আর্থিক দ্বন্দ্বের জের ধরেই এ ছক কষা হয়। তবে কে কার কাছে টাকা পাবেন– এটা নিশ্চিত হতে কাজ করছেন গোয়েন্দারা। সূত্রটি বলছে, বন্ধু শাহীনের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন এমপি আজীম। ওই টাকা দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করছিলেন না তিনি। ওই টাকা গায়েব করে দিতে হত্যার পরিকল্পনা হতে পারে। শোনা যাচ্ছে, প্রায় ২০০ কোটি টাকার সোনা নিয়েই শুরু দ্বন্দ্ব। স্বর্ণ কারবারের চালান নিয়ে বিরোধের জেরে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তিন মাস আগে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীনের রাজধানীর গুলশান-২ ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় বসে খুনের পরিকল্পনা সাজায় তারা। শাহীন এমপির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার।