রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩
প্রকাশিত : ৩:৩২ অপরাহ্ন রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩
শহীদুল ইসলাম বাবর,দেশবাংলা.নেট
অবশেষে দক্ষিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার দু:খ হিসেবে খ্যাত শঙ্খ নদীর ভাঙন রোধের জন্য সরকার গৃহিত পাথরের ব্লক বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম নদীর ভাঙনমুক্ত হবে। আর এতে রক্ষা পাবে হাজারো বসত ঘর,কবরস্থান, মসজিদ ও শত শত একর ফসলী জমি। শঙ্খ নদীতে মোট ৬ টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যায় হবে ৭৫ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোড়ের আওতায় প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বুধবার সকালে এ কাজের উদ্বোধন করবেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নযন বোর্ড় ও স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ভাঙনরোধ প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ দিন পরে হলেও শুরু হওয়ায় খুশিতে আত্মহারা চরতী, আমিলাইশ ও নলুয়া ইউনিয়নের মানুষ দ্বীপ চরতীর বাসিন্দা মনজুর আহমদ জানান, ১৯৫০ সালে শঙ্খনদের অন্তত ১ কিলোমিটার দুরে দ্বীপ চরতীতে বসতি গড়ে উঠে। নদী ভাঙনে বসতঘর হারিয়ে সেই সময়কার আব্দুর কাদের, আবু বক্কর, সোলতান আহমদ, সৈয়দ নুর, আব্দুল কুদ্দুস, ইউছুপ আলী, মো. নছিম, আব্দুর রহমান, সৈয়দ আহমদ, হাবিবুর রহমান, জালাল উদ্দিন, আব্দুল ছবি, বদিউল আলম, আব্দুর করিম ও আব্দুল হক সর্বপ্রথম দ্বীপ চরতীতে বসতি গড়ে তুলেন। কালের পরিক্রমায় এখন এই গ্রামে বসবাস করেন অন্তত ১৪ হাজার মানুষ। স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয়েছে দারুল ইসলাম দাখিল মাদাসা। পুরো সাতকানিয়া উপজেলায় মোট ২৪টি মাদ্রাসার মধ্যে অত্যন্ত পশ্চাদপৎ জনপদে ওই মাদ্রাসাটির অবস্থান হলেও পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক। এ মাদ্রাসাটিও বিলীন হয়ে গিয়েছিল। বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত দক্ষিন পাড়া শাহি জামে মসজিদ, তিনটি বড় কবরস্থান, ছিদ্দিকিয়া (রাঃ) এতিমখানা ও হেফজখানা ও আব্দুল ফকির (রাঃ)মাজার ও কবরস্থানএ আর বসত ঘর হারিয়েছে মাওলানা আব্দুল হালিম, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ নাছির, সাবেকুর রহমান (সাবু), আবুল কাসেম, ফজলুল হক,মাওলান মোহাম্মদ ইসমাঈল, সামশুল ইসলাম, মোহম্মদ হারুন, ওসমান গনি, মোহাম্মদ ইউনুছ,আবু তাহের, মাঈনুদ্দিন, ,হাছিনা বারুন, জহুরা বেগম, জামাল আহমদ, ক্বারী মাওলানা মোহাম্মদ নোমান,মোহাম্মদ ইলিয়াছ, আবদুস সালাম, নুরুল ইসলাম, নুরুল আমিন, হাফেজ মাওলানা আবু ছালেহ, নুরুল আলম, মোজাম্মেল হক,বেলায়েত হোসেন সওদাগর, মোহাম্মদ ইউনুচ ও নুরুন্নবীসহ অন্তত শতাধিক পরিবার। আরো অন্তত শতাধিক পরিবার আছে ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড় সূত্রে জানা গেছে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর চরতী ইউনিয়নের ভাঙন রোধে সরকার চরতীর তুলাতলীতে ৯শ মিটার, উত্তর ব্রাক্ষনডেঙ্গা ৮শ মিটার, দক্ষিন চরতী দেড়শ মিটার ও দ্বীপ চরতীতে ৭শ মিটার জুড়ে পাথরের ব্লক বসানো হবে। ৩ অক্টোবর সকাল থেকে দ্বীন ব্যাপী এসব প্রকল্প সমূহের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। চরতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাক্তার রেজাউল করিম বলেন, আমার এলাকার নদী ভাঙন সমস্য দীর্ঘ দিনের। দীর্ঘ দিন থেকেই আমরা নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছি। সর্বশেষ মামনীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর প্রচেষ্টায় নদীভাঙনরোধে সরকার নদী ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণ করল। প্রকল্প গুলো সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হলে ভাঙন সমস্যা আর থাকবেনা। পানি উন্নয়ন বোর্ড় পটিয়া পওর শাখা-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনুপম দাশ জানান, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় শঙ্খ ও ডলু নদীর ভাঙনরোধে ৩শ ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে দ্বীপ চরতীতে ৭শ মিটার, দক্ষিন চরতীতে ১শ ৫০ মিটার, নলুয়া ইউনিয়নের মখতেয়ারের কুম এলাকায় ৮ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকায় ৬শ মিটার, আমিলাইশে ১৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ১ হাজার ১শ ৫০ মিটার, উত্তর ব্রাক্ষণডেঙ্গায় ১০ কোটি ১০ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যায়ে ৮শ মিটার, তুলাতলীতে ১২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ৯শ মিটার ও নলুয়ার মৈশামুড়া এলাকায় ১৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ১ হাজার ৩শ মিটার মিলিয়ে মোট ৭৫ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা ব্যায়ে শুধুমাত্র সাতকানিয়ার শঙ্খ নদীতে মোট ৫ হাজার ৬শ মিটার ভাঙন কবলিত এলাকায় পাথরের ব্লক বসানো হবে।আর ৩ অক্টোবর বুধবার সকালে এসব কাজের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি। দ্বীপ চরতীর বাসিন্দা এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন, অর্ধ শতাব্দি থেকে দ্বীপ চরতীর মানুষ শঙ্খনদের ভাঙ্গনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। এমপি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় ভাঙ্গনরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় ভাঙ্গন সমস্যা থেকে মুক্ত হবে দ্বীপ চরতীর মানুষ। আমিলাইশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সারওয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুধুমাত্র গত বর্ষা মৌসুমেই নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক বসত ঘর। এছাড়াও বাশখালী উপজেলার পুকুরিয়া, সাতকানিয়ার চরতী, আমিলাইশ ও কাঞ্চনা ইউনিয়নের মানুষ চলাচলের মাধ্যমে মৌলভীর দোকান দুরদুরী সড়কটিরও বেশ কিছু অংশ নদীর ভাঙ্গনে পড়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে ভাঙনরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন এ ইউনিয়নবাসীর জন্য অত্যান্ত আনন্দের খবর। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড় চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার শাহা বলেন, অনেক চেষ্টার পর মাননীয় এমপি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় শঙ্খ নদীর ভাঙনরোধ প্রকল্প গুলো অনুমোধন হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙ্গন সমস্যা থেকে মুক্ত হবে লাখো মানুষ। এ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, শুধু শঙ্খ নদী নয়, ডলু নদীতেও ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সাতকানিয়া-লোহাগায় ৩শ ৩৩ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন হবে। গত সাড়ে চার বছরের অধিক সময়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানান তিনি।