শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সাতকানিয়ায় আমজাদ চেয়ারম্যান হত্যায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত : ৫:৩১ পূর্বাহ্ন শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

 

দেশবাংলা ডেস্কঃ

 

সাতকানিয়ায চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন হত্যা মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। দীর্ঘ ২২ বছর আগে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

রোববার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক একেএম মোজাম্মেল হক এ রায় ঘোষণা করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এসইউএম নুরুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ও মামলার বাদী সৈয়দা রওশন আক্তার বলেন, ‘স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে ২১ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পেয়ে আমি আনন্দিত। আমি আর কিছু চাই না।’

১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর সাতকানিয়া মির্জারখিল দরবার শরিফের সামনে সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

ওই ঘটনায় তার স্ত্রী সৈয়দা রওশন আকতার বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নেজাম উদ্দিন, জাহেদ, আবু মো. রাশেদ, মানিক, জিল্লুর রহমান, মো. রফিক, ফারুক আহমেদ, জসিম উদ্দিন, বশির আহমদ ও তারেক। তাদের মধ্যে শেষ দুজন পলাতক।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. ইদ্রিস (বাবার নাম ইব্রাহিম), হারুণ, মো. আইয়ুব, মোরশেদ আলম এবং ইদ্রিস (বাবার নাম সাহেব মিয়া)। তাদের মধ্যে শেষ তিনজন পলাতক।

খালাস পাওয়া চারজন হলেন- তাহের, শায়ের, মোস্তাক আহমেদ ও আবদুল মালেক।

নিহত আমজাদ হোসেনের ভাতিজা আইনজীবী আবদুল আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “দীর্ঘদিন পর বিচার পেয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আসামিরা বারবার নানাভাবে বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছে।”

তিনি বলেন, “আমার চাচা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তিনি দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায়, ডাকাত ধরিয়ে দেওয়ায় এবং ডাকাতরা পুলিশের কাছে আসামিদের নাম বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমার চাচাকে হত্যা করে।

এদিকে সকালে রায় ঘোষণার আগে নেজাম উদ্দিনের অনুসারীরা আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের অনুসারীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে নেজাম উদ্দিনের অনুসারীরা সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যায়। বাক বিতণ্ডার মধ্যে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

চেয়ারম্যান আমজাদ ছিলেন চার মেয়ে ও এক ছেলের জনক। সোনাকানিয়ায় মির্জাখীল দরবার শরীফের উত্তর পাশে তার বাড়ি।

বাদীর আইনজীবী মো. আবুল মাজন মাসুম বলেন, “দরবারের পূর্বপাশে স্থানীয় প্রভাবশালী লুৎফুর রহমান চৌধুরীর বাড়ি। এলাকার মানুষের উপর লুৎফুর রহমানের ‘অন্যায়-অত্যাচারের’ প্রতিবাদ করায় তিনি আমজাদ হোসেনের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।

“এছাড়া ১৯৯৯ সালের ২৬ অগাস্ট সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় পুলিশের যৌথ অভিযানে ডাকাত গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করেন আমজাদ হোসেন। সেই ডাকাতরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে নেজাম উদ্দিন ও বশির আহমদের নাম বলে। ডাকাতি নির্মূলে ভূমিকা নেওয়ায় এবং এলাকায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় লুৎফুর রহমান ও নেজাম উদ্দিনরা মিলে আমজাদ হোসেনকে খুন করে।”

পরে লুৎফুর রহমান চৌধুরী মারা গেলে মামলা থেকে তার নাম বাদ পড়ে।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নেজাম উদ্দিন ঘটনার সময় ‘বিএনপির রাজনীতিতে’ সম্পৃক্ত থাকলেও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন বলে আমজাদের পরিবারের দাবি। মৃত্যুদণ্ডের আরেক আসামি বশির আহমদও সাতকানিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

শুরুতে পুলিশ মামলাটি তদন্ত করলেও পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে তদন্তভার ন্যস্ত হয়।

২০০০ সালের ২২ ডিসেম্বর সিআইডি ২০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৪ সালের ২৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত আসামিদের বিচার শুরু করে।

একাধিকবার আদালত পরিবর্তনের মধ্যেই ২০১৯ সালের মার্চে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। চলতি বছরের শুরুতে মামলাটি আবার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে।

১১ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। নেজাম উদ্দিনসহ সেদিন উপস্থিত ১০ আসামির জামিন বাতিল করে আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়।

এরপর ২৬ নভেম্বর ও ৭ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। সবশেষ রোববার ১৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল আদালত

আরো পড়ুন