জব্দকৃত মাদকের মূল্য আনুমানিক ১০ কোটি টাকা
কক্সবাজার থেকে এই মাদক যাচ্ছিল ঢাকায়
শহীদুল ইসলাম বাবর
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা। সাতকানিয়া থানায় গোপন সূত্রে খবর আসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে রাতে পাচার হবে অন্তত ১০ কোটি টাকার মাদক। এই খবরের সুত্র ধরে রাত ১০টা থেকে গভীর রাত ২ টা পর্যন্ত অপেক্ষায় একদল চৌকস পুলিশ সদস্য। রাত দুইটার সময় এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার থেকে-ঢাকাগামী একটি মিনি ট্রাক পৌঁেছ কেরানীহাটের অদুরে তেমহুনী এলাকায় পুলিশের চেকপোষ্টে। পুলিশ গাড়িটি দাড় করালে ফোনে কথা বলার ভান করে গাড়ি থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে চালক। পুলিশ দৌড়ানি দিয়ে গাড়ির চালক কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকার গুরা মিয়ার পুত্র ফয়সাল আহমদ প্রকাশ ফজল (২৯) ও হেলপার উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প নং- ০৭ এর আনজুর হোসেন পুত্র জাহিদ আলম (২০)কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মিলে মিলে এই গাড়িতে করেই সু-কৌশলে পাচার করা হচ্ছিল ভয়ানক মাদক আইসে। পরে তল্লাসী চালিয়ে গাড়ির সামনের এয়ার কুলারের ডেস বোর্ডের ভেতর থেকে ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইসসহ (ক্ষতিকর মাদক)।
এমন তথ্যই গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার সময় থানায় সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু। এসময় সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার দে, এসআই শেখ সাইফুল আলম , এসআই জাকির হোসেনসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রামের ইতিহাসে এটিই বর্তমানে সর্বোচ্চ মূল্যের ভয়ানক মাদক আইস উদ্ধারের ঘটনা। পুলিশ জানায়, কক্সবাজারে কাজ করা “হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল” নামের একটি এনজিওতে কাজ করা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কর্মস্থল পরিবর্তণ হওয়াতে তিনি তার ব্যবহৃত মালামাল নিয়ে ঢাকার উদ্যেশে রওয়ানা করেন (ঢাকামেট্রো-ড-১১-৯৩৪২) নাম্বারের একটি মিনি ট্রাক। এই মিনি ট্রাকেই তল্লাসী চালিয়ে উপরোক্ত ব্যাক্তিদের আটক ও ক্রিস্টাল মেথ বা আইস উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া থানার সেকেন্ড অফিসার শেখ সাইফুল আলম বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়েই আমরা সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানীহাটের অদুরে কেওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী এলাকার নেজাম উদ্দিন এন্ড ব্রার্দাস এলপিজি ফিলিং ষ্টেশনের সামনে চেক পোষ্টে তল্লাসী জোরদার করি। রাত আনুমানিক দুইটার সময় গাড়িটি চেকপোষ্টে পৌছলেই আমরা সিগন্যাল দিয়ে গািিড়টির গতিরোধ করি। এরি মধ্যে গাড়ির চালক ফয়সাল আহমদ প্রকাশ ফজল মোবাইল ফোনে কথা বলার ভান করে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। আমরা তাকে ধাওয়া করে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে উদ্ধারকৃত আইসের সন্ধান পায়।
সংবাদ সম্মেলনে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু জানান, ইয়াবা ট্যাবলেটে অ্যামফিটামিন ( রাসায়নিক ) ৫ পার্সেন্ট। সেখানে ক্রিস্টাল বা আইস মাদকে অ্যামফিটামিন রয়েছে শতভাগ। এটি খুবই ভয়ঙ্কর। আমরা এই ভয়ঙ্কর মাদকের উৎস ও গন্তব্য সর্ম্পকে জানতে চেষ্টা করছি। ধৃত মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সাতকানিয়া থানা পুলিশ মাদক কারবারীদের গ্রেপ্তারে সব সময় সচেষ্ট রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে আজকে আমরা একটি আধুনিক ও ভয়ানক মাদকের চালান উদ্ধার করতে পারলাম। মাদকের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ক্রিস্টাল মেথ কি?
অনলাইনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ক্রিস্টাল মেথ হ'ল স্ফটিক মেথামফেটামিনের সংক্ষেপণ। এটি ড্রাগের মেথামফেটামিনের একমাত্র রূপ।
মেথামফেটামিন একটি সাদা স্ফটিক জাতীয় ড্রাগ যা মানুষ শুঁকিয়ে (নাক দিয়ে শ্বাস ফেলা), ধূমপান করে বা সুই দিয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করে। কেউ কেউ এটিকে সরাসরি মুখের মাধ্যমে গ্রহণ করে তবে সকলেই এটি গ্রহণের দৃ ধ় ইচ্ছা বৃদ্ধি করে, কারণ ড্রাগ ড্রাগের সুখ এবং কল্যাণের একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে - আত্মবিশ্বাস, হাইপার্যাকটিভিটি এবং শক্তি। লোকেরা ক্ষুধাও কমে যায়। এই ওষুধের প্রভাবগুলি সাধারণত ছয় থেকে আট ঘন্টা অবধি স্থায়ী হয় তবে চব্বিশ ঘন্টা পর্যন্ত চলতে পারে।
প্রথম অভিজ্ঞতা কিছু পরিতোষ জড়িত হতে পারে, কিন্তু শুরু থেকে সবঃযধসঢ়যবঃধসরহব ব্যবহারকারীর জীবন ধ্বংস শুরু হয়। এটি একটি খুবই ক্ষতিকারক মাদক দ্রব্য।