বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
আসসালামু আলাইকুম। আমি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা ও সমাজকর্মী।
আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার আপোষহীন নেতৃত্বে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের জনগণকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা উপহার দেওয়া। যার প্রথম প্রতিফলন দেখা যায় তাঁরই হাত ধরে রচিত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন বাংলাদেশ সংবিধানে। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৮(ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্র তাঁর পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করবে এবং তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চালু করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের ন্যায় পুরো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। সাথে সাথে দেশের ১৮ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে চিন্তা করছেন। ইতোমধ্যে অনেক সেক্টরের মানুষের জন্য প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। দেশের একজন মানুষও যাতে না খেয়ে থাকে তজ্জন্য সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। আপনার মেধা, কঠোর পরিশ্রম ও দিকনির্দেশনায় আমরা করোনাযুদ্ধেও জয়ী হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যোগ্য রাষ্ট্রনায়কের সুযোগ্য কন্যা হিসেবে ১৯৯৬ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তখন থেকেই আপনার সুনজরে থাকে দেশের পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর দিকে। এই পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য চালু করতে থাকেন একের পর এক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মূসচি। যার মধ্যে অন্যতম হল বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা এবং অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা। এই তিন কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে প্রায় ৮০ লক্ষ লোক ভাতা পেয়ে আসছে। তারমধ্যে বয়স্কভাতা পান ৪৪ লক্ষ লোক। জনপ্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে। বৎসরে মোট ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। বিধবা ভাতা পান ১৭ লক্ষ লোক। জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে। বৎসরে মোট ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। প্রতিবন্ধী ভাতা পান ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার লোক। জনপ্রতি ৭৫০ টাকা করে। বৎসরে মোট ১৩শ ৯০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। আমার জানামতে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ১ম ও ২য় কিস্তির অর্থ বেশীরভাগ জায়গার ভাতাভোগীরা ভাতা পাননি। ভাতাভোগীদের জন্য ব্যাংকে আলাদা কাউন্টার থাকার নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করেননি। যার কারণে ভাতাভোগীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, ভাতাবিতরণকারী ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনীহা ও অবহেলার কারণে দরিদ্র লোকগুলো নির্ধারিত সময় চলে যাওয়ার পরও তাদের ভাতার অর্থ হাতে পায় না অথচ রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই টাকা ছাড় করা হয়। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে সারা দেশে ভাতার আওতাভুক্ত এই দরিদ্র লোকগুলো সবচেয়ে কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষের নানা অযৌক্তিক' অযুহাতের কারণে এই ক্রান্তিলগ্নেও ভাতার অর্থের নাগাল পাচ্ছেন না আপনার এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন ভাতা বিতরণকারী ব্যাংকগুলোর প্রতিটি শাখা খোলা রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভাতাভোগীদের বকেয়া ভাতাসহ সম্পূর্ণ ভাতার টাকা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে করোনার প্রভাবে গৃহবন্দি হওয়া ভাতাভোগীরা রমজানে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করতে পারবেন। বিষয়টি আপনার সুনজরে আনার জন্য আমি সমাজকর্মী হিসেবে বিনীত প্রার্থনা করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, এদেশের খেটে-খাওয়া মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল ও ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ঠিকানা। আপনি বাঙ্গালী জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ার একমাত্র কারিগর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের প্রতিটি মানুষের অবিচল আস্থা ও ভরসা স্থান অর্জন করে নিয়েছেন আপনি। দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি আপনি ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশে আশ্রয় দিয়ে বহির্বিশ্বে নজির স্থাপন করে আপনি 'মানবতার মা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এতে শুধু আপনি সম্মানিত হননি, এদেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মানিত করেছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে সুখে-শান্তিতে রাখতে আপনার চেষ্টারও কমতি নেই। বিশেষ করে গরীব-দুখী, অসহায়, প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আপনার সুদৃ্ষ্টি সবাইকে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষ করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এ পরিস্থিতিতে সবাই গৃহবন্দি হয়ে গেছে। এতে বিশেষ করে গরীব-দুখী, অসহায় ও প্রতিবন্ধীরা ঘর থেকে বের হতে না পেরে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে “লোহাগাড়ায় কোন শারিরীক প্রতিবন্ধী অভূক্ত থাকবে না” এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে করোনা পরিস্থিতিতে উপজেলার প্রতিটি শারিরীক প্রতিবন্ধীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে আসছি। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গৃহবন্দি হওয়া অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে লোহাগাড়া ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় “ভ্রাম্যমাণ ফ্রি চিকিৎসাসেবা” কার্যক্রম শুরু করেছি। যা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আমি ১৬ বছর যাবত উপজেলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।
আজ বড় আবেগের জায়গা থেকে একজন আপন মানুষের কাছে চিঠি লিখেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমার ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনি আমাদের মা। সন্তানের এ বেদনা নিশ্চয়ই আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। আপনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে আমার বিশ্বাস। আপনার জন্য সবসময় শুভকামনা প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অবিরাম। আমি মহান আল্লাহর কাছে আপনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
নিবেদক
আরমান বাবু রোমেল
সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ।
চেয়ারম্যান, উপজেলা সমবায় সমিতি, লোহাগাড়া।
প্রতিষ্ঠাতা, লোহাগাড়া ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল।
মোবাইল : ০১৭১১-১২২৩৮৫