শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫
প্রকাশিত : ১:২৫ পূর্বাহ্ন শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫
শরীফ উল্যাহঃ
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুরু হচ্ছে এবারের এসএসসি পরীক্ষা। গত ১৯ জুন পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার কথা থাকলেও সিলেটে ভয়াবহ বন্যার কারণে পরীক্ষা পিছিয়েছে তিন মাস। বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি ও বাংলাদেশে এর প্রভাবের কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় লম্বা সময় ধরে বন্ধ থাকায় নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় বই-পুস্তকের সাথে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সংযোগ ছিল না বললেই চলে।
তবে সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, দীর্ঘ বিরতির পর আবার বহু আকাঙ্ক্ষিত এসএসসি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই অধীর আগ্রহে পরীক্ষায় বসার জন্য অপেক্ষা করছে। তবে শিক্ষা জীবনের অতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট অর্জনের এই পরীক্ষা দিতে পারাটা অনেকের জন্য মহা আনন্দের বিষয়। আবার পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই এক শ্রেণির পরীক্ষার্থীর মনে টেনশনও বাড়তে থাকবে। এছাড়া কিছু পরীক্ষার্থী আছে যাদের পরীক্ষা নিয়ে খুব একটা টেনশন নেই। এই শ্রেণি পরীক্ষার আগে যতটুকু সম্ভব প্রস্তুতি নিবে, পরীক্ষার খাতায় যা পারে লিখে আসবে। রেজাল্ট যা হবার হবে । এ নিয়ে তাদের কোনো টেনশন বা মাথাব্যাথা নেই।
এখানে আমি উল্লিখিত তিনটি শ্রেণির জন্য আলাদা আলাদাভাবে এবং সবার জন্য কমন কিছু পরামর্শ দিতে চাই। যারা পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এবং যাদের কাছে পরীক্ষাটা আনন্দের বিষয় হতে যাচ্ছে। আমি অনুমান করছি- তারা হয়তো অনেক ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। তবুও তাদের উদ্দেশে বলবো, তোমাদের প্রস্তুতিটা আরও ভালো করে শাণিত করে নাও। প্রস্তুতি অনেক ভালো নিয়েছো মনে করে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বিষয়কে বেশি সহজ মনে করা কিংবা কোনো বিষয়কে কম গুরুত্ব দেওয়া মোটেও সমীচীন হবে না। সব বিষয়কে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে৷ কোনো সাবজেক্ট সহজ মনে হলে সেটিও ভালো করে পড়তে হবে, যথাযথভাবে রিভাইজ দিতে হবে। বিভিন্নভাবে প্র্যাকটিস করে নিজেকে যাচাই করতে হবে৷ আর কঠিন বিষয়ে অবশ্যই তুলনামূলক সময় বেশি দিতে হবে। সারাবছর যতই পড়াশুনা করে থাকো অনেক কিছুই ভুলে যেতে পারো। পরীক্ষার আগে এই সময়ে যত বেশি পড়বে তত বেশি মনে থাকবে এবং এতে করে পরীক্ষায় তোমাদের ভালো করার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। আগামী দিনগুলো সুন্দর করে ভাগ করে সাবজেক্ট অনুযায়ী দিন ও সময় নির্ধারণ করে পুরোপুরি পড়াশুনায় লেগে থাকতে হবে। কোনোভাবেই এখন সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
আর পরীক্ষা এগিয়ে আসার সাথে সাথে যাদের টেনশন বেড়ে চলছে তাদের উদ্দেশে বলবো, এই মূহুর্তে টেনশন করার কোনো দরকার নেই। ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে থাকো। দেখবে টেনশন কমে যাবে। পড়াশুনা যত কম করবে। বই-পুস্তকে সময় যত কম দিবে ততই তোমার টেনশন বাড়তে। কিন্তু বিশ্বাস করো, পড়াশুনায় বেশি সময় দিলে তুমি টেনশন করার সময়ই পাবে না। এতে তোমার আত্মবিশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকবে। আর টেনশন একদম উধাও হয়ে যাবে। প্রস্তুতি ভালো হবে। পরীক্ষাও ভালো হবে। উপরে উল্লিখিত কৌশল অবলম্বন করবে। দুর্বলতা বের করে একটু সময় দিয়ে দুর্বলতা দূর করতে হবে। আর পারা বিষয় ও জানা বিষয়গুলো দ্রুত রিভাইজ করতে পারো।
আর তৃতীয় শ্রেণিভুক্তদের বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, দশটি বছর স্কুল জীবনে কষ্ট করে একটি একটি ক্লাসে উর্ত্তীর্ণ হয়ে এখন এসএসসি পরীক্ষার্থী দিতে যাচ্ছো। তোমাদেরকে নিয়ে তোমাদের মা-বাবার বুকভরা স্বপ্ন। তোমরা পড়াশুনা করে বড় কিছু হবে। উন্নত ক্যারিয়ার গড়বে কিংবা ভালো কিছু করবে। ছোটবেলা থেকে তোমাকে বড় করা এবং তোমাকে পড়াশনা করানোর জন্য তারা যে কষ্ট আর ত্যাগস্বীকার করেছেন তা নিশ্চয়ই বিফলে যাবে না। তোমাদের প্রতি অনুরোধ এই সময়ে পড়াশুনায় একদম অবহেলা করবে না। মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে থাকো। দেখবে, তাক্বদীর ভালো হলে অপ্রত্যাশিত সাফল্যও তোমার কাছে ধরা দিতে পারে।
সকলের জন্য যে কথাটি বলা প্রয়োজন মনে করছি তা হলো- আমাদের অনেক শিক্ষার্থী বুঝেই না যে, কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মনোযোগের ঘাটতির কারণেই সে বিষয়ে তাদের দুর্বলতা তৈরি হয়। এভাবে তাদের মধ্যে পড়াশুনা নিয়ে ধীরে ধীরে একটা ভীতিও জাগতে থাকে। অথচ প্রয়োজনীয় মনোযোগ দিলেই সেই দুর্বলতা দূর হয়ে যায়! এবিশ্বাস ও মনোবল ধারণ করেই চেষ্টা করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। পড়াশুনায় সময় দিতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বলবো, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে তোমাকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে। এক্ষেত্রে সবার কৌশল একরকম নাও হতে পারে। সবাই নিজের জন্য প্রযোজ্য কৌশলগুলো প্রয়োগ করবে। পরীক্ষার পূর্বে এই সময়ে এবং পরীক্ষার সময়ে স্বাস্থের প্রতিও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। সাধ্য অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুমাতে হবে। এই সময়ে পড়াশুনা বহির্ভূত অহেতুক আড্ডা, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। লম্বা সময় টিভি দেখে অথবা গল্প করে সময় নষ্ট করা যাবে না। পড়াশুনা করতে করতে ক্লান্তি বা একঘেয়েমি তৈরি হলে অল্প পরিমাণ খেলাধুলা বা বিনোদন করা যেতে পারে। তবে এখন সকল বিষয়ে অবশ্যই সময় সচেতন হতে হবে। পরীক্ষার হলে নকল করা বা অসদুপায় অবলম্বন করার চিন্তা সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষার হলে যেতে হবে। তবেই পরীক্ষা ভালো হবে এবং সাফল্য তোমাদের কাছে ধরা দিবে।
লিখকঃ
উপজেলা নির্বাহী অফিসার,লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম।