আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের উদ্যোগ থেকে সরে আসার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ইসিকে উদ্দেশ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘ইভিএম/ডিভিএম ক্রয়ের উদ্যোগ ত্যাগ করুন। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা আর ঘনীভূত করবেন না। জনগণের কথা ভাবুন, এখনো সময় আছে। তা না হলে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায় নিতে হবে। আমরা ইসিকে দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ডিজিটাল জালিয়াতির পথ থেকে সরে আসুন। অন্যথায় যড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে এ অপকর্মের মূল্য দিতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ও সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করতে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের অপকৌশল হাতে নিয়েছে। আসলে সরকার জনগণকে বাদ দিয়ে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে।’
‘২০১০ সালে একটি ইভিএম কেনা হয়েছে ১০ হাজার টাকায়। আর এখন সেটি কেনা হচ্ছে ২০ গুণ বেশি দামে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকার বেশি মূল্যে। মূলত এটি জনগণের অর্থ লোপাটের একটা প্রক্রিয়া। কারণ সরকার ইসিকে সুযোগ করে দিয়েছে, তোমারা জনগণের অর্থ লোপাট কর আর আমাদের নির্বাচনে জিতিয়ে ক্ষমতায় আন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হঠাৎ কী কারণে, কাকে বিজয়ী করার উদ্দেশে, কার নির্দেশে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। দেশের জনগণ কোনোভাবে নির্বাচনে ইসির এ অপকৌশল বাস্তবায়ন হতে দেবে না। তারা যে কোনো মূল্যে নির্বাচন কমিশনের এ অপকৌশল প্রতিহত করবে।’
বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘ইভিএমের মতো বিতর্কিত যন্ত্র কেনার জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে তার প্রতিটি পয়সা কমিশনের কর্তাদের ব্যক্তিগত দায় হিসেবে গণ্য হবে। এই অপকর্মের সম্পূর্ণ দায় নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও অসৎ উদ্দেশ্যে বিপুল অর্থ লোপাটের ষড়যন্ত্র দেশবাসী কোনোভাবে মেনে নেবে না।’
নির্বাচন কমিশন নির্বাচন নিয়ে সরকারের সব অপকৌশল বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তারা ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। এর জন্য আরপিও সংশোধন করে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার দূরভিসন্ধিমূলক উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা আবারও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসতে নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাচ্ছি। না হলে জনগণের আন্দোলনে এর বিরুদ্ধে উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে এর দায় ইসিকেই নিতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলেছি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সময়ও আমরা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না বলে মত দিয়েছি। তখন কমিশনও বলেছে, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে না। কিন্তু নির্বাচনের তিন মাস আগে হঠাৎ করেই কার নির্দেশে ইসি জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ও ডিভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত এটি ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারকে আবার ক্ষমতায় বসানোর অপকৌশল।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বিশ্বের ৯০ ভাগ দেশে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পদ্ধতি চালু নেই। বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, ইভিএমের ভোট পদ্ধতিতে নির্বাচনে জালিয়াতি সম্ভব। এটি সহজেই হ্যাকিং করা যায়।’
নির্বাচন কমিশন সচিবের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখন আর নির্বাচন কমিশন বলতে কিছু নেই। আছেন শুধু একজন সচিব। যা বলার কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন-ই বলেন। নির্বাচন কমিশনের কোনো সচিব সহজে কোনো কথা বলেন না। অথচ এই ইসি সচিব-ই বলেছেন, আরপিও সংশোধন হবে না। আর এখন নির্বাচনের তিন মাস আগে তিনিই বলছেন, ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধন করা হবে।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। নির্বাচনে আগে প্রার্থীর নমিনেশন ছিনিয়ে নেয়, ভোটের আগে ব্যালট বক্স পূর্ণ করা, ভোট জালিয়াতি এরই মধ্যে দৃশ্যমান। কিন্তু নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলে নির্বাচনের আর কোনো অংশ অবশিষ্ট থাকবে না। ভোটে ইভিএম ব্যবহার বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কফিনে সর্বশেষ পেরেক ঠুকা ছাড়া আর কিছু নয়।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যতই ষড়যন্ত্র করুক- নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।