বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। ১৬ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে বিভিন্ন ধর্মের লোকের বসবাস। তাদের মধ্যে প্রায় ৯১ ভাগই মুসলিম, বাকি ১০ ভাগের মধ্যে রয়েছে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের লোক। জাতি, ধর্ম ও ভাষার পার্থক্য থাকলেও বাংলাদেশে তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সাধারণত বিঘ্নিত হয়নি। দেশের সরকার, প্রশাসন, আদালত, শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবখানেই সংখ্যালঘুরা সামানে সমান সুযোগ পাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সংখালঘুরা প্রধান্য পাচ্ছে। এদেশের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও সরকারি কর্মচারির প্রায় ২৫% সংখ্যালঘুরা। এছাড়া বেসরকারি অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। মুসলমানরা তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা দেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল নমুনা বিশ্বের আর কোন দেশে খোঁজে পাওয়া বিরল। বিশ্বের অনেক দেশের জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উদাহরণ হতে পারে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ধর্মনিষ্ঠার সাথে সাথে পারস্পরিক সদ্ভাব, উদারতা প্রতিষ্ঠা করে বসবাস করাই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। প্রত্যেক নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা, সম্পদের সুরক্ষা তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে। এদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংখ্যালঘুদের সাথে তাদের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে নির্বিঘ্নে বসবাস করে। মুসলমানরা যেভাবে ঈদ উৎসব পালন করে তেমনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পুজা, বড়দিন ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব সমানতালে পালন করে। মুসলমানরা যেভাবে মসজিদে উপাসনা করে তেমনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নিজেদের উপাসনালয়ে উপাসনা করে। এতে কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র বাধা দেয় না।
এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। মুসলমানরা এ দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুসলমানরা প্রবল ও সংখ্যায় বেশি হওয়ার কারণে সংখ্যালঘু দুর্বলকে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করে না। বিশ্বের যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন-নীপিড়নের কথা শোনা যায় না। কারণ, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য নয়। ইসলাম শান্তি-সম্প্রীতির ধর্ম। মানবতার ধর্ম। অন্যায়ভাবে কাউকে আঘাত করা, কারো বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া, উচ্ছেদ করে দেওয়া, কারো স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বেঘাত সৃষ্টি করা ইসলামের শিক্ষা নয়। যেখানে সারাবিশ্বে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি এক অনন্য নিদর্শন। কেউ যাতে মন্দিরে হামলা করতে না পারে সেক্ষেত্রে মাদ্রাসার ছাত্রদের মন্দির পাহারা দেওয়ার নিদর্শন রয়েছে এই দেশে। যা বিশ্বে বিরল।
বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা এই দেশের সবাই জানে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন। তাদের নির্যাতনের মাত্রা এতোটাই বর্বর ছিলো যে, ধর্ষণ করার সময়েও আশেপাতশের কোনো লোক এগিয়ে আসেনি। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের একমাত্র কারণ ছিল, তারা বিএনপিকে ভোট না দিয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। ২০০১ সালে এই ঘটনার পর এই দেশ থেকে অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী ভারতে পালিয়ে যায়। ধীরে ধীরে কমতে থাকে তাদের সংখ্যা। এরপর দীর্ঘ সাতবছর পর ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বস্তি পেতে থাকে সংখ্যালঘুরা। এরপর আবারো বাড়তে থাকে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা। বর্তমানে তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এসে দাঁড়িয়েছে।
লেখকঃ
তারেকুল ইসলাম ইমন
সাংগঠনিক সম্পাদক, লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ