সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
প্রকাশিত : ১১:৫৮ অপরাহ্ন সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
লোহাগাড়া(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়ন একটি জনগুরুত্বপুর্ণ ইউনিয়ন। পার্শ্বে রয়েছে চুনতি ইউনিয়ন।চুনতি-পুটিবিলার দু ইউনিয়নের মাঝখানে অবস্হিত ডলুখাল। চুনতি-পুটিবিলা সংযোগ সড়কের ডলুখালে রয়েছে একটি বেইলী ব্রিজ। এটি বান্দরবানের আলীকদম ও লামা উপজেলার সাথে লোহাগাড়া হয়ে চট্টগ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী সেতু। ডলু খালের উপর দীর্ঘদিনের নির্মিত একমাত্র ডলু বেইলী সেতুটি এখন হুমকির মুখে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়,উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের এমচর হাট বাজারের দক্ষিণ হয়ে পশ্চিম পাশ্বে অবস্থিত ডলু খাল। এখানে চুনতি-পুটিবিলার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এই খালের উপর রয়েছে একটি বেইলী ব্রিজ। এটি বান্দরবানের আলীকদম ও লামা উপজেলার সাথে লোহাগাড়া হয়ে চট্টগ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী সেতু।এই ব্রীজ দিয়ে প্রতিদিন শতশত যান চলাচল করছে। অনেক গ্রামের হাজার হাজার স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এই সেতু দিয়ে পার হয়ে চলাচল করতে হয়। সাধারণ মানুষ,পথচারী ও যান চলাচলের একমাত্র সেতু এটি । এই ব্রীজ সছাড়া বিকল্প কোন যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলের জন্য অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ সেতু। দুঃখের বিষয় বর্তমানে বালু খেকোরা ব্রিজের নিচে এবং উপর পাশ থেকে ড্রেজার মেশিন ও বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতি বসিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করে আসছে।
অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন শত শত বালু ভর্তি ট্রাক গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারকে হারাতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
সংশ্লিষ্ঠ সুত্র মতে, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং মেশিন বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪ এর (খ) সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত আইনকে তোয়াক্কা না করে বর্তমানেও বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।বালু উত্তোলনের কারণে এ বেইলী ব্রিজটি সহ আরও অনেক রাস্তাঘাট, ঘরাবাড়ি, কৃষি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।
যেকোন সময় ব্রিজটি ভেঙ্গে শত শত গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার সচেতন মহল।
বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী বলেই এলাকার সাধারণ মানুষ মুখ খুলছেননা ।
স্হানীয় এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ আবদুর রহিম জানান, অনেক বছর আগে ডলু খালের উপর নির্মিত হয় এ বেইলী ব্রিজটি। এখন ব্রিজটির অবকাঠামো একবারেই নড়বড়ে অবস্থায় পরিণত হয়েছে। রিকশা কিংবা সিএনজি যোগে বাড়ীতে যাওয়া আসা করার সময় এটি কেঁপে ওঠে। এই সেতুর নিচ থেকে বছরের বছর নিয়ম অপেক্ষা করে যেভাবে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে যে কোনো সময় ব্রিজটি ভেঙ্গে যেতে পারে।
পুটিবিলা ইউপি মেম্বার মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান,ব্রীজটি অনেক পুরোনো। আমাদের এলাকার হাজার হাজার মানুষ এই ব্রীজ দিয়ে চলাচল করে আসছে। কিন্তু ব্রীজের নিচে ডলুখাল হতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ব্রীজটি এখন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এলাকার অনেক ঘরবাড়ি, কৃষি জমিরেও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
স্হানীয় এলাকার বাসিন্দা কালা মিয়া জানান, বেইলি ব্রীজটি এলাকার অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজ। এই ব্রীজ ভেঙ্গে পরলে হাজার হাজার মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হবে ।বালু উত্তোলনের কারণে এই ব্রীজটি হুমকির মুখে।বালু খেকোরা অনেক বেশী প্রভাবশালী।এরা প্রভাব কাটিয়ে নিয়মিত বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এই বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আমাদের কৃষি জমি রক্ষা করা মসকিল হয়ে দাঁড়াবে।অচিরেই সেতুটি দ্রুত সংস্কারের জোর দাবী জানাচ্ছি।
পুটিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান হাজ্বী মুহাম্মদ ইউনুচ জানান, ব্রীজটি দীর্ঘদিনের পুরোনো। ডলুখালের উপর নির্মিত এই ব্রীজ চলাচলের অন্যতম মাধ্যম। বালু উত্তোলনের কারণে বেইলি ব্রীজটি এখন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
চুনতি ইউপির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জনু কোম্পানী জানান, ডলু খালের উপর নির্মিত ব্রীজ দিয়ে এলাকার শত শত যানবাহন, হাজার হাজার লোকজন যাতায়াত করে থাকে। বেইলি ব্রীজের নিচে অবৈধভাবে বালু উত্তোলেনের কারণে এখন হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দ্রুত সংস্কারের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী ইফরাত বিন মুনীর জানান,ডলু খালের উপর বেইলী ব্রিজের বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে নতুন ব্রীজ নির্মাণের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মুহাম্মদ আহসান হাবীব জিতু জানান, আমি প্রতিদিন অবৈধ বালু খেকোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। বিভিন্ন এলাকা হতে অনেক বালু জব্দ করেছি। ডলুখালের উপর নির্মিত বেইলি ব্রিজটির নিচে হতে কোন ধরণের বালু উত্তোলন করা যাবেনা। পরবর্তীতে আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করব।
দ্রুত বেইলি ব্রিজ মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও তিনি জানান।
বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ও সেতুটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।