শহীদুল ইসলাম বাবর,দেশবাংলা.নেট
সন্তানদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে গ্রামে আসা ছেড়েই দিয়েছিলেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড়ের মোহাম্মদ আলী সিকদার পাড়ার গৃহবধু জুলেখা খানম ফারজানা (৩৫) শহরে থাকলেও গ্রামে বসবাস করা শাশুড়ি ও আত্মীয়দের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি। গতকাল রবিবার চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় গ্যাস লাইন বিস্ফোরনে ছেলে সন্তানসহ মর্মান্তিক ভাবে নিহত হয় এ্যাডভোকেট আতাউর রহমানের স্ত্রী ফারজানা। তার শিশু সন্তান আতিকুর রহমান শুভ(৮)সহ ফারজানা নিহত হওয়ার খবর কালিয়াইশস্থ শ্বশুড় বাড়িতে পৌছঁলে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ শাশুড়িকে শান্তনা দেওয়ার জন্য ভীড় করেছেন প্রতিবেশিরা। স্বজনদের শান্তনা দেওয়ার পাশপাশি জুলেখা খানম ও তার শিশু সন্তান আতিকুর রহমানের লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রবিবার বিকালে কালিয়াইশ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড়ের মোহাম্মদ আলী সিকদার পাড়াস্থ এড্যাভোকেট আতাউরের বাড়িতে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, আতাউর ফারজানার ছিল দুই সন্তান। বড় ছেলের নাম আতিকুর রহমান শুভ সে নগরীর সেন্ট প্লাসিডস স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। ছোট ছেলে আতিফুর রহমান শুভ্র (৫) পড়তো নাশার্রিতে। দুই ছেলের মধ্যে একজনকে স্কুলে দিয়ে এসেছেন। আরেকজনকে প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন মা জুলেখা খানম ফারজানা। পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোড অতিক্রম করার সময় কিছু বুঝার ওঠার আগেই ঘটে দুর্ঘটনা। মা ও ছেলের ওপর দেয়াল ধসে পড়লে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।
আতিফুর রহমান শুভ্রের গৃহশিক্ষিকা অ্যালিনা বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন দুই ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়া করেন ফারজানা ম্যাডাম। বাসার পাশেই বড় ছেলে আতিকুরকে একজন প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় পড়াতে নিয়ে যেতেন। প্রতিদিনের মতো আজ (রোববার) সকালে আতিফুরকে স্কুলে দিয়ে এসে বড় ছেলে আতিকুর রহমানকে প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় মারা যান মা-ছেলে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছেলের হাত ধরে মা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেয়াল ধসে পড়লে অনেকের সঙ্গে তারা দুজনও নিহত হয়। চোখের পলকেই ঘটে গেলো এ দুর্ঘটনা। নিহত জুলেখা খানম ফারজানার ভাসুর লোকমান হাকিম বলেন, আমরা তিন ভাইয়ের মধ্যে আতাউর সবার ছোট। সে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করত। তার দুই ছেলেই আমাদের অত্যান্ত আদারের। গত রমজামের ঈদে আতাউরের সাথে ফারজানা ও দুই সন্তানও এসেছিল। ঈদ শেষ করে তারা আবার শহরে চলে যায়। কোরবানির ঈদে আতাউর আসলেও ছেলেদের পরীক্ষা থাকায় তার স্ত্রী ও সন্তানরা আসতে পারেনি। আর আজ লাশ হয়ে তারা ফিরছেন আমাদের ঘরে। রাত নয়টার সময় স্থানীয় মসজিদে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
এদিকে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে স্ত্রী সন্তানদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে কান্নায় বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবি আতাউর রহমান। স্বজনরা তাকে বার বার শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছে। আতাউরের একটাই প্রশ্ন এখন আমি কি নিয়ে বাচবো