বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত : ৬:৩৮ অপরাহ্ন বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
রায়হান সিকদার,লোহাগাড়া প্রতিনিধিঃ
লোহাগাড়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ বেঙ্গল। তিনি বর্তমানে লোহাগাড়া উপজেলা কমান্ড`এর দায়িত্ব পালন করছেন।১৯৭১সালে মহান তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ছিল অতুলনীয়।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ বেঙ্গল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে ৬৯ এর গণভূত্থানের অন্য দশজন ছাত্রের মতো আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা ও রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে মাঠে ময়দানে ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ থেকে এলাকার ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে এগিয়ে যাই পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, পাঞ্জাবীরা পুরা এলাকাগ্রাস করে নেওয়ার পর তখন দলে দলে যুবকেরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে চলে যাচ্ছিল।তিনি ১৫ই এপ্রিল শ্রীনগর সীমান্ত পার হয়ে পরিদন ভারতের মনু বাজারের থানায় পৌঁছেন।সর্বপ্রথম দেওয়া হলো ত্রিপুরা রাজ্যের শেষ সীমানায় ওমপি নগর ক্যাম্পে। এটাই আমরাই ১ম ব্যাচ আমাদের দিয়ে ইকু কোম্পানী গঠন করে। তার আগে যে কটি কোম্পানী গঠিত হয়ে ছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলফা, ভ্রেবু, ছাল্লি ও ডেলটা, ইকু এভাবে প্রায় দু’মাস ট্রেনিং শেষ আমাদেরকে হারিনা ক্যাম্পে ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়। ওখান থেকে ক্যাপটেন মতিয়র রহমান সেনাবাহিনী ও ক্যাপটেন অলি আহমদ (বর্তমানে কর্ণেল আমি বীর বিক্রম) সহ আমরা ৩৫ জনের একটি গ্রুপকে দুইভঅবে বিভক্ত করে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে নোয়াখালী (বর্তমানে ফেনী জেলার) ছাগল নাইয়ার থানার সিদ্ধার বাজার প্রেরণ করে, ওখানে প্রায় ২০০ জন সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সমন্বয়ে সম্মুখ যুদ্ধে ১৫দিন শত্রু নিধনে ব্যস্ত ছিলান। একটা ট্রুপস্ এর মুখা মুখি আক্রমন পাল্টা আক্রামনের মাধ্যমে আমাদের অবস্থান সুদৃড় হওয়াতে আমরা ঐ ট্রুপ্সটা সম্পূর্ণ ধ্বংস করিতে সমর্থ হয়েছিলান। তারপর আমরা আবার হরিনা ক্যাম্পে ফেরৎ আসেন। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ক্যাপটেন মাহফুজ বীর উত্তর এর নেতৃত্বে সাবরুম বর্ডারে রানিরহাট চা বাগানে ক্যাম্প স্থাপন করি। আমাদের মূল কাজ ছিল, বর্ডারে নির্মিথ সীমান্ত চৌকিগুলোতে আক্রমন করা এবং নিরাপদ অবস্থানের মাধ্যমে চৌকি ধ্বংস করে ভারতে চলে যাওয়া, এভাবে ১৪ই আগষ্ট (পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে দিন) রাত্রে আমরা তিন ভাবে বিভক্ত হয়ে আমরা একটা ব্রীজ একটা এলেক্ট্রিক টাওয়ার এবং গুরুত্বপূর্ণ বর্ডার চৌকি ধ্বংস করি। তার কয়েকদিন পর আমাদের ৮৫ গেরিলা তপন ও হামিদ গ্রুপ (সাতকানিয়া ১ম প্রুপ) নিয়ে সাবরুম বর্ডার ক্রস করে ফটিকছড়ি এসে পৌঁছি, তার দু’দিন পর রাউজান অবস্থান করেন । এইভাবে রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী একটি গ্রুপসহ শ্রীপুরে সেনের বাড়ীতে উঠি, পরদিন একজন গাইডারসহ আমাদের পৌঁছাইয়া দিল ধলঘাট সেনের বাড়ীতে ওখান থেকে ফেরদাউস ইসলাম খাঁন ও মোজাহেরুল হক আমাদের বরকল শাহ্ জাহান ইসলাবাদীর ক্যাম্পে উঠি এরপর আমরা আনোয়ারা থানা অপারেশনে অংশ নিউ ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত যুদ্ধ করে তাদের পরাস্থ করেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ বেঙ্গল। ঐ থানার সব রাজাকার ও পাকিস্তানি মিলুশিয়াদের বন্দি করে তাদের অস্ত্র শস্ত্র গুলো সহ আমরা বাঁশখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং সন্ধ্যায় বাঁশখালীর কুন্ড ষ্টেটে পৌঁছান। ঐখানে কিছু দিন অপেক্ষা করে আবার চলে গেলাম চন্দনাইশের ধুঁয়াছড়িতে গিয়ে পৌঁছলে আবদুল হামিদ বেঙ্গলসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করেন। তারা পিছু হাটে চলে যাওয়ায় আমরা ভারতের উদ্দেশ্যে ধুঁয়াছড়ি ত্যাগ করেন । কারন তাদের আর্মস ও এমুনিশান (গোলাবারুত) কমে যাওয়াতে আর্মস এমুনিশান এর জন্য ভারতে যেতে হলো পথের মধ্যে জালিয়াপাড়া (নয়াপতং) পরোয়া সম্মুখ যুদ্ধে টি.এম আলী নিহত হন। হাবিলদার আবু ইসলাম, সুলতান আহমদকে (কুমুমপুরী এম.এন.এ) আহত অবস্থায় নিয়ে বাঁশখালীর আবদুল রহমান চৌধুরীর ক্যাম্পে উঠি (জারুল ছড়ি) পরবর্তীতে মুজিবনগর প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য দেমাঘ্রী (ভারত) গিয়া তদানিন্তন এম.এন এ সাতকানিয়া জনাব আবু ছালেহ সাহেবের সাথে যোগাযোগ হয়। তারপর মিত্র তিব্বত ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডে যুদ্ধে অংশ নিউ পরোয়া ও বরকলেল মতো ব বড় ঘাটি গুলোতে। কুসমপুরী সাহেবের আলফা গ্রুপ আর জৈলান্দ সিং (ভারতীয় মিত্র বাহিনী) ও এস.কে কুইয়ান (তিব্বত বাহিনী) এর নেতৃত্বে ক্যাপটেন কুম সহ (আমি ব্যক্তিগত ভাবে কুম এর দেহরক্ষী হিসাবে ছিলাম) মিত্র বাহিনীর সদস্যরা ডেল্টাগ্রুপের সদস্য হিসাবে আমরা অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তারা যখন পরোয়া জয় করে বরকলেল উদ্দেশ্যে একদিন চলার পর হঠাৎ উপরের নির্দেশে আমাদের যাত্র বিরতি হলো। বরকলের মতো সামরিক ঘাঁটি উৎখাকত করতে হলে, বিমান হামলা অপরিহার্য। পরদিন সকালে দুটি বিমান দম দম বিমানবন্দর থেকে এসে বার বার আক্রমন শুরু করে বরকল সামরিক ঘাটিতে পাঞ্জাবীদের দারুন ক্ষতি করে। পরদিন তাদের আক্রমনে মরার উপর খরার মত। তারপরও সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে সন্ধ্যার বেশ আগেই সাদা পতাকা তুলে পরাজয় স্বীকার করে নিলেন আর তারা ঐ ঘাঁটি দখল করেন। পরদিন শুভলং হয়ে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে স্টিমার যোগে যাত্রা শুরু করেন । দু’টার সময় রাঙ্গামাটিতে পৌছলে রাঙ্গামাটির জনসাধারণের পক্ষ থেকৈ এস.ডি. ও এইচ টি ইমাম রাণী বিনিতা রায় লঞ্জস ঘাটে আমাদের স্বাগতম জানান এবং মিত্র ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউস ময়দানে স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলন করেছেন।
তারপর অস্ত্র জমা দিয়ে নিজের এলাকায় ফিরে এসে বাঙ্গালী সমাজে আন্দনের সাথে মিশে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ বেঙ্গল।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ বেঙ্গল ছিলেন একজন দুঃসাহসী রণবীর। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়।