শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত : ২:১৪ পূর্বাহ্ন শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
শহীদুল ইসলাম বাবর, ধোপাছডি থেকে ফিরে
‘আমার স্বামী ও শাশুড়ি আমাকে জোর করে বিষ খাইয়ে দিয়ে তিন দিন ঘরে আটকে রাখেন। তিন দিন পর গভীর রাতে আমাদের বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায়। পরে আমার এলাকার লোকজন উদ্ধার করে আমাকে এখানে (চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) নিয়ে আসে। চার লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তিন থেকে চারবার আমাকে মেরেছে।’
গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের এমন বর্ণনা দেন গৃহবধূ আয়েশা ছিদ্দিকা (১৮)। গত ২৯ অক্টোবর রাতে মারা যান আয়েশা। এরপর গত ৩০ অক্টোবর বুধবার দুপুরে নিজ বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয় আয়েশা ছিদ্দিকাকে।
তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের শিলঘাটার বাসিন্দা আব্দুল আলিমের মেয়ে। গত ২০ অক্টোবর সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় আয়েশাকে। সেখান থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আয়েশা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর আমাকে আমার শাশুড়ি জয়নাব বেগম গলা চেপে ধরে আর আরিফ (আমার স্বামী) বিষ খাওয়াইয়া দেয়। স্থানীয় নেতা মোস্তাক, নাজিমের ক্ষমতার দাপটে আমার ওপর নির্যাতন করেছে আমার স্বামী। আমি আমার ওপর নির্যাতনকারীদের বিচার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাই। সহায়তাকারীদের ফাঁসি চাই। তাদের বিচার হলে আমি মারা গেলেও আমার আত্মা শান্তি পাবে।’
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পরিবারের অমতে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রেকঘাটা এলাকার প্রবাসী প্রেমিক আরিফুল ইসলামের হাত ধরে ঘর ছাড়েন আয়েশা। আয়েশাকে বিয়ে করে নিজ ঘরেও তোলেন আরিফ। বিয়ের মাত্র ১৫ দিন না পেরুতেই চার লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আয়েশার ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন।
আয়েশার ওপর নির্যাতনের সময় শাশুড়িকে ফোন করে তা শোনাতেন আরিফ। ফোনের একপ্রান্তে অসহায় আয়েশার কান্নার চিৎকার আর অন্যপ্রান্ত থেকে মেয়েকে না মারার জন্য আয়েশার মায়ের আকুতি মিনতি। কিন্তু তাতে কাজ হতো না। আরিফ বাড়িয়ে দিতেন নির্যাতনের মাত্রা।
ধোপাছড়ি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি দলের কর্মী পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারকারীদের প্রভাবে বেশ উগ্রভাবে চলাফেরা করতেন আরিফ। তাদের ক্ষমতার দাপটের কারণেই আরিফ ভালবেসে বিয়ে করা স্ত্রী আয়েশাকে যৌতুকের দাবিতে মারধর করেছে। ওই কথাটিই মারা যাওয়ার আগে বলে গেছেন আয়েশা।
ধোপাছড়ি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হামজা জানান, আয়েশা সিদ্দিকা মারা যাওয়ার রেশ ধরে তার আত্মীয় স্বজনরা আরিফের বাড়িতে হামলা করেছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারীদের প্রতিহত করে।
আয়েশা ছিদ্দিকা মারা যাওয়ার ঘটনায় তার বাবা আব্দুল আলিম বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় একটি মামলা করেছেন।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেশব চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি আরিফকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে