রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রকাশিত : ১২:২৪ পূর্বাহ্ন রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় রাজঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিকক্ষ মিলে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। আর তাদের পড়ানোর জন্য আছেন ৪ শিক্ষক। মানসম্মত পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
উপজেলার ছোট ছোট পাহাড়-টিলা বেষ্টিত চরম্বা ইউনিয়নের ৩১ নম্বর রাজাঘাটা সরকারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ রয়েছে মোট ৬টি। তার মধ্যে আছে ৪ শিক্ষক। এর মধ্যে ১ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণে। আরেক শিক্ষিকা চিকিৎসার ছুটিতে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে আছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকাসহ ২ জন। ৬ শিক্ষকের বিদ্যালয়টিতে শতাধিক শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষকের দাবি তাদের শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৩ জন। যদিও সে সংখ্যা শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
ছাত্ররা নিজ নিজ শ্রেণির বানানও করতে পারছে না ইংরেজিতে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান ভালো করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের। তারা বলেন, শিক্ষকরা বলে শিক্ষার্থী থাকলেও বেতন পাব, না থাকলেও পাব। এমনিতেই নূরাণী মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্ডেন স্কুল হওয়াতে শিক্ষার্থী কম। এরপরেও যা ছিল তাদেরও যদি ভালোভাবে পড়াতো তাহলে এই অবস্থা হতো না।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত আছেন ২ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে এক শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করছেন ৫ জন শিক্ষার্থীকে। অপর শিক্ষক দাঁড়িয়ে আছেন বিদ্যালয়ের বারান্দায়। ৫ম শ্রেণী কক্ষে ৯ জন শিক্ষার্থী গল্প করছে। অন্যান্য শ্রেণী কক্ষগুলো তালাবদ্ধ।
ছাত্ররা নিজ নিজ শ্রেণির বানানও করতে পারছে না ইংরেজিতে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান ভালো করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের। তারা বলেন, শিক্ষকরা বলে শিক্ষার্থী থাকলেও বেতন পাব, না থাকলেও পাব। এমনিতেই নূরাণী মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্ডেন স্কুল হওয়াতে শিক্ষার্থী কম। এরপরেও যা ছিল তাদেরও যদি ভালোভাবে পড়াতো তাহলে এই অবস্থা হতো না।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত আছেন ২ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে এক শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করছেন ৫ জন শিক্ষার্থীকে। অপর শিক্ষক দাঁড়িয়ে আছেন বিদ্যালয়ের বারান্দায়। ৫ম শ্রেণী কক্ষে ৯ জন শিক্ষার্থী গল্প করছে। অন্যান্য শ্রেণী কক্ষগুলো তালাবদ্ধ।
জানা গেছে, উপজেলায় এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৩৭ সালে। একসময় ভরপুর শিক্ষার্থী ছিল এই বিদ্যালয়ে। কিন্তু, ধীরে ধীরে পড়ালেখার মান, বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় বিদ্যালয় থেকে ঝরতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গত ২ বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। বিদ্যালয় খোলা হলেও পরিচালনা কমিটি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে প্রভাব পড়ে বিদ্যালয়ের ওপর। ভেঙে পরে পড়ালেখার মান। ফলে, শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববতী শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানে ভর্তি হয়ে যায়।
এলাকার সচেতনমহলের কয়েজন ক্ষোভের সাথে বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার একগুয়ামী আচরণের কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তাই, এলাকার ছেলে-মেয়েদেরকে এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করান না অভিভাবকরা।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা খালেদা বেগম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে শিক্ষকেরা সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়েও তাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসতে পারিনি। কেন জানিনা, কিছু লোক তাঁর বিরুদ্ধে। তারা লিখিতভাবে একাধিক অভিযোগও করেছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে। দেশে করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভের পর থেকে শিক্ষার্থী কমে আসে। এলাকার অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষার জন্য নূরানী ও এবতেদায়ী মাদ্রাসায় ভর্তি করছে। এসব ছেলে-মেয়েরা অত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না আসলে শিক্ষকদের করার কি আছে।
তিনি আরো বলেন, অন্তত: ১ বছর থেকে এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই। উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আওতায় কলাউজান ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুকে প্রধান করে ইতোমধ্যে একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে অত্র বিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের। প্রধান শিক্ষিকা আরও বলেন, অত্র বিদ্যালয়ে আর কোন সমস্যা নেই। জানতে চাইলে বলেন, অন্তত: ১২ বছর থেকে অত্র বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আবদুল আলম নামে এক অভিভাবক বলেন, আমরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাই ভালো শিক্ষা অর্জনের জন্য। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় না। যে কারণে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।
মহিউদ্দীনে নামের আরেক অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পড়ায় না। আমরা বারবার পড়ালেখা নিয়ে অভিযোগ করেছি। বাধ্য হয়ে ছেলেকে ভালো পড়ালেখার জন্য অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দীন বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার সাথে আমার দ্বন্দ্ব রয়েছে। তিনি কোন বিষয়ে আমার সাথে সমন্বয় করে না। তার একগুয়ামী আচরণের কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষকেরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না এবং ভালো পড়ালেখা করায় না। যে কারণে অভিভাবকেরা সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো ফল পাইনি। তবুও, আমি গতকাল (২৪ অক্টোবর) সোমবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবারও লিখিত অভিযোগ করেছি।
চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন জানান, উক্ত বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার ব্যাপারে শুনেছেন নানা অভিযোগ। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট জানিয়েছেন মুঠোফোনে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেছেন, কিছু দিন হলো এ ক্লাষ্টারের দায়িত্ব পেয়েছি। এসেই বিষয়গুলো শুনেছি। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে প্রয়োজনে মা ও অভিভাবক সমাবেশ করে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়া থাকলে সেগুলো অনুসরণ করা হবে। তবে, কেন শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে, সে বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফ উল্যাহ বলছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।