বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রকাশিত : ৬:৩৯ অপরাহ্ন বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ উল্যাহ, শিক্ষার জন্য নিবেদিত এক প্রাণ, ঘরে ঘরে যেন শিক্ষার আলো জ্বালানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলছেন নিরবধি। ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই যিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত স্বচ্ছতা, সততা, আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা ও দৃঢ়তার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের বেশ আস্থা অর্জন করেছেন। একইসাথে তিনি এই উপজেলায় অনেকগুলো ব্যতিক্রমী শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করে শিক্ষার মানোন্নয়নে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। গত এক বছরে শিক্ষাসচেতন মানুষ, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা তাঁর কার্যক্রমসমূহের সুফল সম্পর্কে দারুণভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। যার ফলে এখন লোহাগাড়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে শিক্ষার দীপশিখা দিন দিন উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে বলে অনেকে দাবি করেন। করোনায় আক্রান্ত শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন ও শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ইউএনও যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট’।
২৬ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত ইউএনও শরীফ উল্যাহ ১৫ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর বাড়িতে ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট’ করেন। আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী মুহাম্মদ রায়হান, সাইদুল আনোয়ার, ফারদিন কবির, ফয়সাল হোসেন ইমন, রবিউল হোসেন হৃদয়, চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাজিদ ইবনে হাসান, আতাউর রহমান সানি, ফাইরোজ শাহরিন, কাইসান ফারাজ, মারুফুল ইসলাম, মেহেরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোহাম্মদ জিসান, মিশকাতুল জান্নাত ডালিয়া তাবাসসুম, ঈশিতা জান্নাত সুবাইতা, মাহিম উদ্দিন সিপন, বাহার উদ্দিন এর বাড়িতে ইউএনও আকস্মিক সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিটে যান। শিক্ষার্থীদেরকে বইমুখী এবং পড়াশুনায় মনোযোগী করতে তিনি এ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। হোম ভিজিটকালে তিনি মূলত শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পর যথাসময়ে বাসায় প্রবেশ করেছে কি না, বাড়িতে পড়াশুনা করছে কি না ও সার্বিক প্রস্তুতির খোঁজখবর নেন। অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়া পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ও একটি বই সম্বলিত ‘উইনার্স ব্যাগ’ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সান্ধ্যকালীন এমন আকস্মিক ভিজিটে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। যেসব শিক্ষার্থীর বাড়িতে তিনি গিয়েছেন সেসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিস্মিত, অভিভূত ও অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন। তারা ধারণাই করতে পারেননি, উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ অফিসার এভাবে সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে ভিজিট করতে চলে আসবেন। তারা মনে করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় এতটাই শিক্ষাবান্ধব যে তিনি অনেকগুলো ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনায় অবিশ্বাস্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যা শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নেও অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। তারা বলেন, এমন কার্যক্রমে আমাদের সন্তানরা পড়াশুনায় আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। গত বছরও তিনি অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে সান্ধ্যকালীন ভিজিট করেছিলেন। প্রশাসনের এমন কঠোর মনিটরিং থাকলে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে উন্নতি অবশ্যম্ভাবী।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব শরীফ উল্যাহ জানান, এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষা সন্নিকটে। পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে ক্লোজ মনিটরিং এ নিয়ে আসা, তারা যাতে সন্ধ্যার পরে অহেতুক বাসার বাইরে না থাকে, আড্ডা না দেয়, খারাপ সঙ্গে জড়িয়ে না পরে, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি না করে, মাদকাসক্তি ও অসামাজিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত না থাকে এবং তাদেরকে পড়াশুনায় মনোযোগী করা ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগটি হাতে নিয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা বইমুখী হলে, পড়াশুনায় মনোযোগ দিলে সামগ্রিক অর্থে শিক্ষা জীবনে তাদের সাফল্য ও উন্নতি হবে এবং জীবনে তারা অনেক উপরে উঠতে পারবে। একার্যক্রম ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। আশা করি, এতে আমাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। তিনি আরও বলেন, এবছর এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে আমরা গরীব মেধাবী এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে প্রাধান্য দিয়েছি। আমরা সন্ধ্যার পরপরই তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। প্রথমদিন আমরা মোট ১৫ জন শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়েছি। তাদেরকে প্রয়োজনীয় কিছু শিক্ষা উপকরণ ও বই উপহার দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন আকস্মিক ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট’ এলাকাবাসী, সচেতন সমাজ, অভিভাবক ও শিক্ষকমহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। তাদের মতে, এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যতিক্রমী ও অসাধারণ একটি বিষয়। স্যারের এই কার্যক্রম শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। শিক্ষাসচেতনতা বৃদ্ধিতে ও শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন উদ্যোগ অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও তারা বিশ্বাস করেন। একইসাথে তারা চান, শিক্ষা ক্ষেত্রে মানসম্মত পরিবর্তন আনয়নে ও আমাদের আগামীর প্রজন্মকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে গড়ে তুলতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অন্যান্য ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের পাশাপাশি এই কার্যক্রমও যাতে চলমান থাকে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অফিসার জনাব নুরুল ইসলাম জানান, আমার দীর্ঘ চাকুরি জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলবো— ইউএনও কর্তৃক ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট’ বিষয়টি সম্পূর্ণ অসাধারণ একটি বিষয়। আসলে আমাদের ইউএনও মহোদয় সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমকে বেগবান ও কার্যকর করার লক্ষ্যে এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই যেসব কাজ করে যাচ্ছেন ইতোমধ্যেই সর্বমহলে সেগুলো খুবই প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আশা করি, অচিরেই আমরা লোহাগাড়ার শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিটে’ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জনাব মুহাম্মদ মাহবুব আলম শাওন ভূঁইয়া, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব নুরুল ইসলাম, চুনতি মেহেরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।