বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

অদম্য ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস ও প্রয়াস থাকতে হবেঃলোহাগাড়ার ইউএনও শরীফ উল্যাহ

প্রকাশিত : ৪:৪০ অপরাহ্ন বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

রায়হান সিকদারঃ

দক্ষিণ চট্টগ্রাম অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লোহাগাড়া উপজেলার দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৫ সেপ্টেম্বর সকালে বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব অলি উল্যাহ চৌধুরী।

অভিভাবক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) শরীফ উল্যাহ।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক অধ্যাপক সামশুদ্দিন শিশির।

গেস্ট অব অনার ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আশরাফ আলী চৌধুরীর দৌহিত্র, বিদ্যালয়ের সাবেক বার বার নির্বাচিত সভাপতি শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী মুহাম্মদ ফোরকান উল্যাহ চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য প.প কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ হানিফ, উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান, লোহাগাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুুহাম্মদ নুরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার সমশুল আলম।

বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মাস্টার মুুহাম্মদ হারুনুর রশিদের সঞ্চালনায় অভিভাবক সমাবেশে বক্তব্যে রাখেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাস্টার অাখতার কামাল চৌধুরী,উত্তর আমিরাবাদ এমবি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার বার নির্বাচিত সভাপতি, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মিয়া মুুহাম্মদ শাহজাহান বিন আবদুল আজিজ, উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ শের আলী,বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার দৌহিত্র ফরমান উল্যাহ চৌধুরী, বিদ্যালয়ের সাবেক অভিভাবক সদস্য সরওয়ার আকতার প্রমুখ।

উত্তর আমিরাবাদ এমবি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি, রাজনীতিবিদ মিয়া মুহাম্মদ শাহজাহান বিন আবদুল আজিজ বলেছেন, এ বিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। একজন সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অভিভাবকের ভূমিকা অনেক বেশী। আমরা যারা অভিভাবক রয়েছি, আমরা ঘরের বাইরে বেশী সময় ব্যয় করি, সন্তানের পাশে মায়ের ভূমিকা বেশী রয়েছে। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবো।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার সমশুল আলম বলেছেন,সন্তানদের সাথে ভাল আচরণ করতে হবে। আপনাদের সন্তানকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অভিভাবক-অভিভাবিকাদের ভূমিকা অপরিসীম। সন্তানকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সফল সভাপতি শিক্ষানুরাগী ও শিল্পপতি মুুহাম্মদ ফোরকান উল্যাহ চৌধুরী বলেছেন,আমার মরহুম দাদা এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা করেছেন এলাকার শিক্ষার মশাল সৃষ্টির জন্য। তোমাদের কে মা-বাবার কথা শুনতে হবে। আমি ছাত্র জীবনে মা-বাবার কথা মেনে বিদ্যালয়,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি অতিবাহিত করেছি। তোমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। তোমরা জীবনে অনেক সফলতা অর্জন করতে পারবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, আমার মা তেমন পড়ালেখা জানতো না। তবে,আমার মা আমাকে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার কথা সবসময় বলতেন। আমি অনেক ছেলে-মেয়ে পড়াতাম। আমার মায়ের ভালবাসা দোয়া আছে বলেই আমি আজকে এ অবস্থানে আসতে পেরেছি। তুমিও জিতবে একটি বই আছে যেখান থেকে অনেক জ্ঞানঅর্জন করা সম্ভব। বেশী করে বই পড়তে হবে। আমিও ছাত্র জীবনে বেশী বেশী বই পড়তাম। এখনো পড়ি। তোমরাও একদিন আলোকিত মানুষ হয়ে এদেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারবে। মা-বাবার দোয়া বিফলে যায়না। আমি সবসময় আমার মা-বাবার আদর্শকে বুকে নিয়ে চলি।

উপজেলা স্বাস্থ্য প.প কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ হানিফ বলেছেন,তোমরা একদিন আলোকিত মানুষ হও, উন্নত জীবন গড়তে পারবে। মা-বাবার কথা সবসময় মেনে চলতে হবে। তাদের সাথে কোন ভাবেই খারাপ আচারণ করা যাবেনা। মা-বাবার পরে শিক্ষকদেরকে সবসময় সম্মান করতে হবে। একদিন তোমরাই সুশিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক অধ্যাপক সামশুদ্দিন শিশির বলেছেন, শিক্ষার্থীরা আমি তোমাদের একজন ভাল বন্ধু। তোমরা সবসময় মা-বাবার কথা শুনবে। শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা শুনবে। স্কুলে চলার পথে রিক্সা চালক, মুুরুব্বীদের সম্মান করতে হবে। তোমাকে একদিন আদর্শিক জাতি হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে হবে। বেশী বেশী বই পড়তে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। আমার মা অস্টম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করেছিলেন। আমাকে আমার মায়ের অবদানে, দোয়ায় আজকে আমি এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার সন্তানদের বেশী চাপ প্রয়োগ করা যাবেনা। তাদের সাথে বন্ধুর মতো আচারণ করতে হবে। তারা একদিন আপনার স্বপ্ন পূরণ করবে। একজন সত্যিকারের প্রকৃত মানুষ হবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি।

 

 

অভিভাবক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ উল্যাহ বলেন, একজন ছাত্র-ছাত্রী পরিশ্রম না করলে, পড়াশুনায় মনোযোগ না দিলে, পর্যাপ্ত সময় না দিলে তার মধ্যে দুর্বলতা তৈরি হতে থাকে। আর এই দুর্বলতা একসময় পাহাড়সম হয়ে তাকে ঘায়েল করে বা চাপ দিয়ে পিছিয়ে দেয়। তাকে আত্মবিশ্বাসহীন করে তোলে। তার পক্ষে সাফল্য লাভের বিষয়টি কঠিন হয়ে যায়। তিনি বলেন, ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, নতুন করে শুরু করতে হবে। মনোযোগ ও পরিশ্রম বাড়িয়ে দিতে হবে৷ তবেই দুর্বলতা শক্তিতে পরিণত হবে। আর এই শক্তি তাকে সাফল্য লাভের আত্মবিশ্বাস যোগাবে। তবে তিনি শিক্ষক অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী সবাইকে স্ব স্ব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, আমরা বর্তমান প্রজন্মকে সুশিক্ষিত ও উন্নত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তবে এলক্ষ্য অর্জনে তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস ও প্র‍য়াস থাকতে হবে। তবেই তা বাস্তবায়ন সম্ভব। সকলের সম্মিলিত প্রয়াস ও সহযোগিতা নিয়ে তিনি লোহাগাড়া উপজেলার সমগ্র এলাকায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে একটি উন্নত পরিবেশ তৈরি এবং কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অভিভাবক সমাবেশ শেষে সকল অতিথিবৃন্দদেরকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্বারক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

আজকে যে অভিভাবকরা ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন এবং স্মরণকালের সবচেয়ে ভালো অভিভাবক সমাবেশ ছিল। অভিভাবক সমাবেশে সকল অভিভাবক-অভিভাবিকাবৃন্দ, সকল শিক্ষার্থীবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন